পিচ্চি বর

পিচ্চি বর 😉
১.
আহা আজকের সকাল টা কতোই না সুন্দর। রাতের ঘুমটাও শান্তির হয়েছে। এক ঘুমে পুরা রাত পার করে দিলাম। এই বাসাটা আগের বাসা থেকে অনেক বেশি সুন্দর। ভাড়াটে হওয়ার সুবিধা গুলা ভালোই। কয়েক মাস বা বছর পর পর নতুন নতুন বাসা।নতুন পরিবেশ, নতুন বাড়িওয়ালা। অসুবিধা হলো বাড়িওয়ালা মাঝেমাঝে না প্রায় বদকার টাইপের হয়। আগের বাসার বাড়িওয়ালা ছিলো বদে পরিপূর্ণ একটা মানুষ। বদ হতে হলে যতো রকমের গুণাবলী দরকার সব তাহার চরিত্রে আসিয়া ভিড়িয়াছে।যাই হোক বদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ওই বাসায় ওঠার ২ মাস পরেই নতুন বাসায় আসতে হয়েছে। এই বাসার বাড়িওয়ালা কে এখনো দেখি নাই। মা বলল বেশ ভদ্র। তবে তার স্ত্রী নাকি অমায়িক চরিত্রের মানুষ। আমি এখনো তাদের সাথে পরিচিত হই নাই তাই সিওর না। এখন বিছানা ছেড়ে ওঠা দরকার। বই, খাতা,কাপড়,কসমেটিক্স আরো বিভিন্ন জিনিষপত্র গোছাতে হবে।
হটাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। বাজছেই কেউ খুলছে না। মনে হয় মা এখনো ঘুমুচ্ছে। আমাকেই যেতে হবে কারন বাসায় আমি আর মা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি নেই। ভাইয়া ২ বছর যাবত স্কলারশিপ নিয়ে অক্সফোর্ড এ আছে। বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। আমি তখন ক্লাস ৯ এ পড়ি। খুব কেঁদেছিলাম। দরজা খুলেই দেখি একজন মাঝবয়সী নারী এক হাতে ফ্লাক্স আরেক হাতে বড় সাইজের প্লেট। প্লেট ঢাকা কিছুই দেখা যাচ্ছে না।আমি সালাম দিলাম। উত্তর দিয়েই বলল মা,আমি তোমার বাড়িওয়ালী আন্টি। বড়োই মিষ্টি কণ্ঠ। আমি বললাম - ভিতরে আসুন।
- না, মা আমার অনেক কাজ আছে ছেলেটা স্কুলে যাবে ওকে খাইয়ে দিতে হবে। আজ না হয় থাক। আমি আরেকদিন আসবো।
- জি।
- আর মা, ফ্লাক্স আর প্লেট টা নাও। তোমাদের জন্য এনেছি।
আমার হাতে দিয়েই আন্টি চোখের পলকে উধাও। মা ঠিকি বলেছিলেন অমায়িক মানুষ।হাতের জিনিষ গুলো টেবিলে রেখে দিয়ে দরজাটা ভালো ভাবে লাগিয়ে দিলাম।। ঘর টা এখনো এলোমেলো। সবে মাত্র ১ দিন। কোথায় কী আছে জানিও না।সকালে চা না হলে আমার চলেই না। আর আজকে চা পাওয়াটা অসম্ভব ছিলো। আন্টিকে বিশাল সাইজের ধন্যবাদ। প্লেটের একপাশে রুটি, একপাশে পরোটা, একপাশে ডিম ভাজা, সবজি আর মুরগির গোস্ত রান্না।।এতো কিছু ক্যামনে খাবো আমি??? মা তো একটা রুটিই খেয়েই খালাস। আর সব আমার খাইতে হবে।পরের চিন্তা পরে আগে ফ্লাক্স থেকে চা পান করে নেই। চা ছাড়া আমার চলেই না 😆।কেবল চা এক চুমুক দিয়েছি হটাৎ একটা চিৎকার ভেসে আসলো।চা টাও খাইতে পারলাম না শান্তি মতো। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম ইহা চিৎকার না। কে যেন বেসুরা কণ্ঠে গান গাচ্ছে।। কিরে জেবা, এতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলি???
- আসলে মা ঘুম ভেঙে গেলো।
- চা, রুটি এগুলা কই পাইলি???
- বাড়িওয়ালী আন্টি দিয়ে গেছে।
- ভালোই হলো। নাস্তা বানানোর টেনশন কমলো।
- হু।
- কলেযে যাবি না???
- নাহ, আজ ঘর গোছাতে হবে।
- না যাওয়াই ভালো। একা একা আমি আর পারি না রে।
- হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করে নাও। তারপর এক সাথে কোমর বেধে লাগবো।
- তুই খেয়ে নে। আমি আসছি।
বাবা চলে যাবার পর থেকে মা যেন কেমন হয়ে গেছে। সারাক্ষণ মন মরা হয়ে বসে থাকে। আমার যতোটুকু সম্ভব তার থেকেও বেশি সময় দিতে চেষ্টা করি।ঘর গোছাতে গোছাতে প্রায় দুপুর শেষের দিকে। কাজের ফাঁকেই মা দুপুরে খাবার জন্য রান্না করেছে। বিকালের দিকে মোটামুটি কাজ শেষ হলো। আমি গোসল করে টেবিলে খেতে বসলাম। মা আর আমি খেয়ে নিলাম।
সন্ধ্যার দিকে বাড়িওয়ালী আন্টি আর তার সাথে পিচ্চি একটা ছেলে আমাদের বাসায় আসলো। পিচ্চিটা অনেক কিউট আর এমন গুটিসুটি মেরে বসে আছে যেন মনে হচ্ছে খুব ভয়ে আছে। আন্টি আর মা গল্প করছে। আমার ছেলেটার নাম জানতে খুব ইচ্ছে করছে। কী নাম হতে পারে??? গাবলু, হাবলু????
এই পিচ্চি তোমার নাম কী???
- আমি পিচ্চি না। আমাকে পিচ্চি বলবেন না।
- তুমি কোন ক্লাসে পড়ো পিচ্চি??
- আবার পিচ্চি বললেন???
- আচ্ছা সরি সরি। তোমার নাম কী???
- মানাফ।
- বাহ কিউট নাম তো! কোন ক্লাসে পড়ো???
- ক্লাস ৯।
- কী?😱
- হ্যা।
- তোমাকে তো দেখে মনে হয় ক্লাস ৫ এ পড়ো।
👿
- পিচ্চি। তোমাকে আমি পিচ্চি বলেই ডাকবো 😃😆
চলবে....... 😉

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অন্যের বউ কে কেন বেশি সুন্দর লাগে

প্রেমের বিয়ে টিকে না কেন...?