মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি
গল্প:- মেঘ না চাইতেই বৃষ্টিヲ
লেখা:- Umme Nipa
বাইরে হালকা বৃষ্টি,ইরা অনেকদিন পর বাসায় ফিরছে।৩বছর যাবত ইরা
ঢাকাতে লেখাপড়া করছে।
চেনা এলাকা,চেনা মানুষ জনদের সাথে দেখা হয়না
বহুকাল।ভার্সিটি বন্ধ হলেই ছুটে আসে।আর মাত্র ২ঘণ্টা
পর মা,বাবা,আর ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা হবে।মোড়
থেকে সি এন জি ঠিক করলো।কিছুক্ষন পর একজন ছেলে
বৃষ্টির মাঝে ভিজতে ভিজতে ইরাকে জিজ্ঞেস করলো,
আপু বাংলাবাজার এখান থেকে কিভাবে যাব?
ইরা একটু
হেসেই বললো,এখান থেকে সি এন জি নিয়ে চলে জান,
ওদের বললেই হবে। তখন ছেলেটা ইরার দিকে তাকিয়ে
বললো,এই সি এন জি কি যাবেনা?
ইরা:- এটা তে আমি আছি দেখেন না? তখন ছেলেটা নিচের
দিকে তাকিয়ে
সামনে গিয়ে দাড়িয়ে সি এন খুঁজছে।
বৃষ্টির মধ্যে কোন
সি এন জি পাচ্ছেনা।
ইরার সি এন জি চালক কে থামতে বলে ছেলেকে ডাক
দিল, ইরা:- আসেন,আমার সি এন জি তে। ছেলেটা:- না থাক, আপনি
জান,আমি চলে যাব। ইরা:- আরে আসুন তো।এখানে আজ সারাদিন
দাড়ালেও পাবেন না।
ছেলেটা কিছু না বলেই উঠলো। সি এন জি চলা শুরু
করলো,সাথে শুরু হলো দু প্রান্তের দু ধরনের মানুষ এর এক
ই দিকে গন্তব্য.....
ইরা টিস্যু দিয়ে ছেলেকে বললো,নিন মাথা মুছে
নিন,ভিজে গেছে।
ছেলে:- না থাক।
ইরা ঝাড়ি দিয়ে বললো,সব বেপারে এতো না না করেন
কেন?
নিন ধরুন।
ছেলেটা নিলো।
ইরা:- নাম কি আপনার?
ছেলে:- আবির।
ইরা:- আমার নাম জানতে চাইবেন না?
আবির:- হুম বলুন.
ইরা:- ইরা, বলে হেসে দিলো। আপনি কি জানেন আমার
বাসাও বাংলাবাজার।
আবির:- তো তখন নিতে চাইলেন
না কেন?? ইরা:- অচেনা মানুষ, তার উপর ছেলে,এতো
সহজে trust করা যায় নাকি?
আবির:- তাহলে এখন নিলেন যে?
ইরা:- আপনাকে দেখে
সুবিধার মনে হয়েছে। আবির:- সুবিধার,হা হা হা
ইরা:- হাসার কি হলো?
আবির:- মানুষ কে দেখে কি চেনা যায়? কত খারাপ
ছেলে আছে যাদের দেখে ভালো মনে হয়,দেখবেন
বেশির ভাগ অসুবিধায় পরে সুবিধার মানুষ গুলি দিয়েই।
ইরা:- তবুও,ছেলেদের বিশ্বাস করতে নেই।তারা ক্ষতিকর।
আবির:- যতই ক্ষতিকর হোক,দিন শেষে একজন স্বামী
হিসেবে সেই ছেলেকেই চায়
ইরা:- বাবা!আপনাকে দেখলে বোঝা যায় ভাজা মাছ
উল্টাতে জানেন না,কিন্তু আসলে তো খুব কথা জানেন।
আবির:- মাছ ভাজতে যে জানে,উলটাতে সে
জানবেই,কিন্তু আপনাকে আমার সুবিধার ই মনে হয়। ইরা:-
আচ্ছা,বাংলাবাজা র কে থাকে?
আবির:- আমার বন্ধুর
বিয়ে।তাই যাচ্ছি
এভাবেই কথা বলতে বলতে চলতে থাকে তাদের গন্তব্যের
পথ চলা.....
আবির:- ধন্যবাদ।
ইরা:- কেন?
আবির:- অচেনা মানুষ কে হেল্প করার জন্য।
ইরা:- শুধু ধন্যবাদ?
আবির:- তাহলে?
ইরা:- সামনে একটা চা এর দোকান আছে,চা খাওয়াতে হবে।
আবির:- আচ্ছা তাহলে ৪কাপ..
ইরা:- কেন?
আবির:- আমি চা বেশি খাই
ইরা:- হি হি হি আচ্ছা।
আবির ও তাতে
অসম্মতি দিতে পারেনি।দুজন ই রাস্তার পাশের এক চা
এর দোকানে,চা খেতে নামলো।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ইরা বসে আসে।আবির চা মুখে
নিয়েই ইরা দিকে তাকালো।এতোক্ষন কথার ফাকে
ইরাকে দেখার সুযোগ ই হয় নি আবির এর।মনে মনে
ভাবছে,এতোক্ষন আমি এই সুন্দরীর সাথে কথা বলেছি!
ভাবাই যায়না। কি মায়াবী চোখ...
ইরা:- কি হলো,কি
দেখেন?
আবির:- চা নিচ্ছেন না যে?
ইরা:- ও,আমি চা ঠান্ডা করে খাই। আবির:- তাহলে
বলতেন,ফ্রিজে রাখা চা দিতে বলতাম।
ইরা:- এ
মা,ফ্রিজের ও চা পাওয়া যায়?
আবির:- হা হা হা,
ইরা:- আবার ফাজলামো?
আবির:- দিন চা এর কাপ আমার হাতে দিন,
ইরার কাপ আবির হাতে নিয়ে উপরের পাখার কাছে ধরলো,
ইরা ভাবছে, সল্প চেনাতেই কি যত্ন।
ইরা:- জানেন,একটু সামনেই,বিশাল ব্রীজ আছে,যাবেন?
আবির:- ব্রীজ এ নিয়ে ধাক্কা দিবেন নাতো? হা হা হা
ইরা:- ব্রীজ এ গেলে আপনার নিজের ই ইচ্ছে হবে পরে
গিয়ে উড়তে।..
আবির:- তাহলে চলুন।
দুজনে হেঁটে হেঁটে ব্রীজে গেলো..
বাতাসে ইরার চুল উড়ে আবির এর মুখে লাগছে।চুল এর
ঝাপটা পেতে আবির এর খারাপ লাগছেনা। ইরা:- আচ্ছা
আপনার প্রেমিকাকে কি বলবেন,যে আপনি এক মেয়ের
সাথে ঘুরেছেন?
আবির: প্রেমিকা,হা হা হা।
ইরা:- তো কি,স্ত্রী?
আবির:- কি যে বলেন...কেউ নেই..আমি আমার মা আর ছোট ভাই।
বাবা মারা গেছেন।
ইরা:- ছেলেরা
এমন ই হয়, প্রেমিকার কথা লুকায়।
আবির:- আরেহ
না,ভালোলেগেছে অনেক কেই,তবে সাহস করে বলতে
পারিনি।
ইরা:- ভীতু।
আবির:- তো,আপনার সাহেব কই থাকেন?
ইরা:- সাহেব
নাই।
ক্লাস নাইন এ বসে প্রেম করেছিলাম,পরে জানি
তার আরো ৩টা প্রেমিকা আছে। তারপর থেকে আর
কাউকে আনতে পারিনি।
আবির:- আপনি খুব সোজা সাপ্টা কথা বলেন।
ইরা:- তাই?
আবির:- হুম,এই যে কি সুন্দর প্রথম প্রেমের কথা বলে
দিচ্ছেন।
ইরা হেসে দিলো,
ইরা:- আপনিও সরল।
আবির:- কিভাবে?
ইরা:- এই যে এখনো এতো সিম্পেল মোবাইল ইউজ করেন।
আবির:- এটা শুধু অফিস এর কাজে কথা বলার জন্য,বাকিটার চার্জ নেই,
ব্যাগ এ।
ইরা:- ও তাহলে আপনি সরল নয়,হি হি হি..
আবির খুব খেয়াল করে ইরার হাসি দেখছে।
ইরা কিচ্ছুক্ষণ পর ই বললো,
ওই যে দেখুন,দূরে রামধনু... কি সুন্দর না বলুন?
আবির তাকিয়ে আছে ইরার হাত আবির এর হাত এর উপর
রেখেছে,সেদিকে।
আবির চুপ দেখে ইরা আবির এর দিকে তাকিয়ে দেখে,আবির হাত
এর দিকে তাকিয়ে আছে।
ইরা:- এ মাহ,সরি..
আবির ইতস্তত হয়ে গেছে।
ইরা:- দেখুন রামধনু।
আবির:- রামধনু তো বার বার আসবে।তবে কিছু মুহুর্ত জীবনে
একবার ই আসে।
ইরা কিছু আন্দাজ করতে পারলো না।
আবির:- চলুন এখন,আকাশ এ মেঘ জমেছে।
ইরা:- তো?নামুক না বৃষ্টি।
আবির:- না। আমি আর ভিজতে চাইনা।কিছু স্পর্ষ পানিতে ধুয়ে যাক, তা
আমি চাইনা।
ইরা:- মানে?
আবির কিছুনা বলে শুধুই ভাবছে,কারো হাতে হাত রাখার কথা।কতো
ভরসা থেকে হাত এ হাত রাখা যায়।
ইরা:- জানেন আমার বৃষ্টি অনেক পছন্দ।
আবির:- আমার ও এখন থেকে।
ইরা:- হি হি হি
আবির:- তবে খারাপ লাগা আছে, বৃষ্টি বলে কয়ে আসেনা।আবার
চলেও যায় না বলে।
ইরা চুপ করে আছে।
ইরা:- চলুন যাওয়া যাক।
আবির:- আর কতদূর?
ইরা:- বেশিনা ১৫-২০মিনিট।
আবির:- ও আচ্ছা।বলে মন খারাপ করে ফেললো।
সি এন জি তে উঠে বসলো দুজন।কিছুক্ষন দুজন চুপ হয়ে
আছে।এরপর ইরা সি এন জি চালক কে থামতে বললো।
আবির:- কি হলো,এসে গেছি?
ইরা:- না, পানি খাবো।
আবির:- ও আচ্ছা,তোমার নামতে হবেনা।আমি নিয়ে আসছি।
ইরা আবির এর দিকে তাকয়ে আছে।কি সুন্দর নিজের অজান্তেই
আপনি থেকে তুমি হয়ে গেলো। মন কতটা সহজে আপন
করে নেয় বলে দীর্ঘনিঃশ্বাস।
আবির পানি নিয়ে এসে দিলো। কিছুক্ষন পর ইরা আবির কে বলছে
এই হলো বাংলাবাজার।এখান েই নেমে জান
আবির:- আপনি?
ইরা:- আমার আর একটু সামনে।
আবির নেমে গেলো।
ইরা সি এন জি থেকে উকি মেরে বলছে, এই যে মশাই ভালো
থাকবেন।বৃষ্টি বলে কয়ে না গেলেও আমি কিন্তু বলেই
গেলাম।বর্ষাকাল কিন্তু বার বার ফিরে আসে।
আবির হাসি দিয়ে বলে,হুম তুমিও ভালো থেকো।
সি এন জি আবার চলা শুরু করলো
আবির সি এন জি এর দিকে তাকিয়ে আছে।সি এন জি আস্তে
আস্তে অস্পষ্ট হচ্ছে।হঠাৎ মনে পরলো,ইরার ফোন নম্বর
বা ঠিকানা কিছুই রাখা হয়নি।
আবির দৌড়াচ্ছে ততোক্ষন এ সি এন জি উধাও।
মন খারাপ হয়ে বন্ধুকে কল দিলো।
আবির:- সিয়াম আমি আসছি,তুই কই আমি দাড়িয়ে আছি।
সিয়াম কিচ্ছুক্ষন পর আবির এর কাছে এলো।
সিয়াম:- কিরে সালা এতোক্ষন লাগে?
আবির:- সিয়াম এখানে ইরাদের বাসা কোনটা বলতে পারিস?
সিয়াম:- ইরা? সে আবার কে?
আবির:- আছে। এই এলাকায় থাকে।চল খুঁজে দেখি।
সিয়াম:- ধূরর,,এলাকা অনেক বড়, বাসায় চল,মা অপেক্ষা করছে
তোর জন্য।
আবির সিয়াম এর বাসায় গিয়ে শুধু শুয়ে শুয়ে ইরার কথা ভাবছে।
নিজের উপর প্রচণ্ড ক্ষোভ হচ্ছে একবার ও ইরাকে ধন্যবাদ
দেয়া হলো না।
ফেবু আইডি চাইলেও হতো।
নিজের শান্ত করতে পারছেনা।
কিছু মানুষ এর সাথে দেখা হওয়াই উচিৎ না।কেন দেখা হলো এই
ভেবেই অস্থির হচ্ছে।
এমন সময় একটা কল আসে আবির এর ফোন এ।
আবির:- হ্যালো..
ইরা:- হ্যালো
আবির:- কে?
ইরা:- রাফি আছে?
আবির:না,রং নম্বর বলে কেটে দিলো।
আবার সেই নম্বর থেকে কল
আবির রিসিভ করেই,আরেহ ভাই আপনি তো সুবিধার না,বলছিনা,রাফি
বলে কেউ নেই।
ওপাশ থেকে:- আচ্ছা তাহলে এখানে সুবিধার আবির কে পাওয়া
যাবে?
আবির:- কে?ইরা?ও মাই গড বলে স্তব্ধ হয়ে গেলো।
ইরা:- এই যে,হুম আমি ইরা বলছি মশাই।
আবির:- কি করে সম্ভব?
ইরা:- আমি আপনার মতো নাকি? ভীতু হি হি হি
আবির:- নম্বর কি করে পেলে
ইরা:- যখন পানি আনতে গিয়েছিলেন,আপনার মোবাইল সি এন জি
তে ছিলো।আমি আপনার ফোন থেকে আমার ফোন এ কল
দিয়ে নম্বর রেখেছি।
আবির:- Thnx god.বলে খাট এ বসে পরলো।
ইরা:- ফোন ধরে যেভাবে ঝারি দিলেন,ভাবছিলাম আপনি আবির না।
আবির:- হা হা হা.. ইরা বর্ষা কাল কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।
ইরা:- হি হি হি।এভাবেই শুরু হলো নতুন পথচলা,সময় হলো অচেনা
থেকে চেনা,অপরিচিত থেকে পরিচিত,পর থেকে আপন হবার।
লেখা:- Umme Nipa
বাইরে হালকা বৃষ্টি,ইরা অনেকদিন পর বাসায় ফিরছে।৩বছর যাবত ইরা
ঢাকাতে লেখাপড়া করছে।
চেনা এলাকা,চেনা মানুষ জনদের সাথে দেখা হয়না
বহুকাল।ভার্সিটি
পর মা,বাবা,আর ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা হবে।মোড়
থেকে সি এন জি ঠিক করলো।কিছুক্ষন পর একজন ছেলে
বৃষ্টির মাঝে ভিজতে ভিজতে ইরাকে জিজ্ঞেস করলো,
আপু বাংলাবাজার এখান থেকে কিভাবে যাব?
ইরা একটু
হেসেই বললো,এখান থেকে সি এন জি নিয়ে চলে জান,
ওদের বললেই হবে। তখন ছেলেটা ইরার দিকে তাকিয়ে
বললো,এই সি এন জি কি যাবেনা?
ইরা:- এটা তে আমি আছি দেখেন না? তখন ছেলেটা নিচের
দিকে তাকিয়ে
সামনে গিয়ে দাড়িয়ে সি এন খুঁজছে।
বৃষ্টির মধ্যে কোন
সি এন জি পাচ্ছেনা।
ইরার সি এন জি চালক কে থামতে বলে ছেলেকে ডাক
দিল, ইরা:- আসেন,আমার সি এন জি তে। ছেলেটা:- না থাক, আপনি
জান,আমি চলে যাব। ইরা:- আরে আসুন তো।এখানে আজ সারাদিন
দাড়ালেও পাবেন না।
ছেলেটা কিছু না বলেই উঠলো। সি এন জি চলা শুরু
করলো,সাথে শুরু হলো দু প্রান্তের দু ধরনের মানুষ এর এক
ই দিকে গন্তব্য.....
ইরা টিস্যু দিয়ে ছেলেকে বললো,নিন মাথা মুছে
নিন,ভিজে গেছে।
ছেলে:- না থাক।
ইরা ঝাড়ি দিয়ে বললো,সব বেপারে এতো না না করেন
কেন?
নিন ধরুন।
ছেলেটা নিলো।
ইরা:- নাম কি আপনার?
ছেলে:- আবির।
ইরা:- আমার নাম জানতে চাইবেন না?
আবির:- হুম বলুন.
ইরা:- ইরা, বলে হেসে দিলো। আপনি কি জানেন আমার
বাসাও বাংলাবাজার।
আবির:- তো তখন নিতে চাইলেন
না কেন?? ইরা:- অচেনা মানুষ, তার উপর ছেলে,এতো
সহজে trust করা যায় নাকি?
আবির:- তাহলে এখন নিলেন যে?
ইরা:- আপনাকে দেখে
সুবিধার মনে হয়েছে। আবির:- সুবিধার,হা হা হা
ইরা:- হাসার কি হলো?
আবির:- মানুষ কে দেখে কি চেনা যায়? কত খারাপ
ছেলে আছে যাদের দেখে ভালো মনে হয়,দেখবেন
বেশির ভাগ অসুবিধায় পরে সুবিধার মানুষ গুলি দিয়েই।
ইরা:- তবুও,ছেলেদের বিশ্বাস করতে নেই।তারা ক্ষতিকর।
আবির:- যতই ক্ষতিকর হোক,দিন শেষে একজন স্বামী
হিসেবে সেই ছেলেকেই চায়
ইরা:- বাবা!আপনাকে দেখলে বোঝা যায় ভাজা মাছ
উল্টাতে জানেন না,কিন্তু আসলে তো খুব কথা জানেন।
আবির:- মাছ ভাজতে যে জানে,উলটাতে সে
জানবেই,কিন্তু আপনাকে আমার সুবিধার ই মনে হয়। ইরা:-
আচ্ছা,বাংলাবাজা
আবির:- আমার বন্ধুর
বিয়ে।তাই যাচ্ছি
এভাবেই কথা বলতে বলতে চলতে থাকে তাদের গন্তব্যের
পথ চলা.....
আবির:- ধন্যবাদ।
ইরা:- কেন?
আবির:- অচেনা মানুষ কে হেল্প করার জন্য।
ইরা:- শুধু ধন্যবাদ?
আবির:- তাহলে?
ইরা:- সামনে একটা চা এর দোকান আছে,চা খাওয়াতে হবে।
আবির:- আচ্ছা তাহলে ৪কাপ..
ইরা:- কেন?
আবির:- আমি চা বেশি খাই
ইরা:- হি হি হি আচ্ছা।
আবির ও তাতে
অসম্মতি দিতে পারেনি।দুজন ই রাস্তার পাশের এক চা
এর দোকানে,চা খেতে নামলো।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ইরা বসে আসে।আবির চা মুখে
নিয়েই ইরা দিকে তাকালো।এতোক্ষন
ইরাকে দেখার সুযোগ ই হয় নি আবির এর।মনে মনে
ভাবছে,এতোক্ষন আমি এই সুন্দরীর সাথে কথা বলেছি!
ভাবাই যায়না। কি মায়াবী চোখ...
ইরা:- কি হলো,কি
দেখেন?
আবির:- চা নিচ্ছেন না যে?
ইরা:- ও,আমি চা ঠান্ডা করে খাই। আবির:- তাহলে
বলতেন,ফ্রিজে রাখা চা দিতে বলতাম।
ইরা:- এ
মা,ফ্রিজের ও চা পাওয়া যায়?
আবির:- হা হা হা,
ইরা:- আবার ফাজলামো?
আবির:- দিন চা এর কাপ আমার হাতে দিন,
ইরার কাপ আবির হাতে নিয়ে উপরের পাখার কাছে ধরলো,
ইরা ভাবছে, সল্প চেনাতেই কি যত্ন।
ইরা:- জানেন,একটু সামনেই,বিশাল ব্রীজ আছে,যাবেন?
আবির:- ব্রীজ এ নিয়ে ধাক্কা দিবেন নাতো? হা হা হা
ইরা:- ব্রীজ এ গেলে আপনার নিজের ই ইচ্ছে হবে পরে
গিয়ে উড়তে।..
আবির:- তাহলে চলুন।
দুজনে হেঁটে হেঁটে ব্রীজে গেলো..
বাতাসে ইরার চুল উড়ে আবির এর মুখে লাগছে।চুল এর
ঝাপটা পেতে আবির এর খারাপ লাগছেনা। ইরা:- আচ্ছা
আপনার প্রেমিকাকে কি বলবেন,যে আপনি এক মেয়ের
সাথে ঘুরেছেন?
আবির: প্রেমিকা,হা হা হা।
ইরা:- তো কি,স্ত্রী?
আবির:- কি যে বলেন...কেউ নেই..আমি আমার মা আর ছোট ভাই।
বাবা মারা গেছেন।
ইরা:- ছেলেরা
এমন ই হয়, প্রেমিকার কথা লুকায়।
আবির:- আরেহ
না,ভালোলেগেছে অনেক কেই,তবে সাহস করে বলতে
পারিনি।
ইরা:- ভীতু।
আবির:- তো,আপনার সাহেব কই থাকেন?
ইরা:- সাহেব
নাই।
ক্লাস নাইন এ বসে প্রেম করেছিলাম,পরে জানি
তার আরো ৩টা প্রেমিকা আছে। তারপর থেকে আর
কাউকে আনতে পারিনি।
আবির:- আপনি খুব সোজা সাপ্টা কথা বলেন।
ইরা:- তাই?
আবির:- হুম,এই যে কি সুন্দর প্রথম প্রেমের কথা বলে
দিচ্ছেন।
ইরা হেসে দিলো,
ইরা:- আপনিও সরল।
আবির:- কিভাবে?
ইরা:- এই যে এখনো এতো সিম্পেল মোবাইল ইউজ করেন।
আবির:- এটা শুধু অফিস এর কাজে কথা বলার জন্য,বাকিটার চার্জ নেই,
ব্যাগ এ।
ইরা:- ও তাহলে আপনি সরল নয়,হি হি হি..
আবির খুব খেয়াল করে ইরার হাসি দেখছে।
ইরা কিচ্ছুক্ষণ পর ই বললো,
ওই যে দেখুন,দূরে রামধনু... কি সুন্দর না বলুন?
আবির তাকিয়ে আছে ইরার হাত আবির এর হাত এর উপর
রেখেছে,সেদিকে।
আবির চুপ দেখে ইরা আবির এর দিকে তাকিয়ে দেখে,আবির হাত
এর দিকে তাকিয়ে আছে।
ইরা:- এ মাহ,সরি..
আবির ইতস্তত হয়ে গেছে।
ইরা:- দেখুন রামধনু।
আবির:- রামধনু তো বার বার আসবে।তবে কিছু মুহুর্ত জীবনে
একবার ই আসে।
ইরা কিছু আন্দাজ করতে পারলো না।
আবির:- চলুন এখন,আকাশ এ মেঘ জমেছে।
ইরা:- তো?নামুক না বৃষ্টি।
আবির:- না। আমি আর ভিজতে চাইনা।কিছু স্পর্ষ পানিতে ধুয়ে যাক, তা
আমি চাইনা।
ইরা:- মানে?
আবির কিছুনা বলে শুধুই ভাবছে,কারো হাতে হাত রাখার কথা।কতো
ভরসা থেকে হাত এ হাত রাখা যায়।
ইরা:- জানেন আমার বৃষ্টি অনেক পছন্দ।
আবির:- আমার ও এখন থেকে।
ইরা:- হি হি হি
আবির:- তবে খারাপ লাগা আছে, বৃষ্টি বলে কয়ে আসেনা।আবার
চলেও যায় না বলে।
ইরা চুপ করে আছে।
ইরা:- চলুন যাওয়া যাক।
আবির:- আর কতদূর?
ইরা:- বেশিনা ১৫-২০মিনিট।
আবির:- ও আচ্ছা।বলে মন খারাপ করে ফেললো।
সি এন জি তে উঠে বসলো দুজন।কিছুক্ষন দুজন চুপ হয়ে
আছে।এরপর ইরা সি এন জি চালক কে থামতে বললো।
আবির:- কি হলো,এসে গেছি?
ইরা:- না, পানি খাবো।
আবির:- ও আচ্ছা,তোমার নামতে হবেনা।আমি নিয়ে আসছি।
ইরা আবির এর দিকে তাকয়ে আছে।কি সুন্দর নিজের অজান্তেই
আপনি থেকে তুমি হয়ে গেলো। মন কতটা সহজে আপন
করে নেয় বলে দীর্ঘনিঃশ্বাস।
আবির পানি নিয়ে এসে দিলো। কিছুক্ষন পর ইরা আবির কে বলছে
এই হলো বাংলাবাজার।এখান
আবির:- আপনি?
ইরা:- আমার আর একটু সামনে।
আবির নেমে গেলো।
ইরা সি এন জি থেকে উকি মেরে বলছে, এই যে মশাই ভালো
থাকবেন।বৃষ্টি বলে কয়ে না গেলেও আমি কিন্তু বলেই
গেলাম।বর্ষাকাল কিন্তু বার বার ফিরে আসে।
আবির হাসি দিয়ে বলে,হুম তুমিও ভালো থেকো।
সি এন জি আবার চলা শুরু করলো
আবির সি এন জি এর দিকে তাকিয়ে আছে।সি এন জি আস্তে
আস্তে অস্পষ্ট হচ্ছে।হঠাৎ মনে পরলো,ইরার ফোন নম্বর
বা ঠিকানা কিছুই রাখা হয়নি।
আবির দৌড়াচ্ছে ততোক্ষন এ সি এন জি উধাও।
মন খারাপ হয়ে বন্ধুকে কল দিলো।
আবির:- সিয়াম আমি আসছি,তুই কই আমি দাড়িয়ে আছি।
সিয়াম কিচ্ছুক্ষন পর আবির এর কাছে এলো।
সিয়াম:- কিরে সালা এতোক্ষন লাগে?
আবির:- সিয়াম এখানে ইরাদের বাসা কোনটা বলতে পারিস?
সিয়াম:- ইরা? সে আবার কে?
আবির:- আছে। এই এলাকায় থাকে।চল খুঁজে দেখি।
সিয়াম:- ধূরর,,এলাকা অনেক বড়, বাসায় চল,মা অপেক্ষা করছে
তোর জন্য।
আবির সিয়াম এর বাসায় গিয়ে শুধু শুয়ে শুয়ে ইরার কথা ভাবছে।
নিজের উপর প্রচণ্ড ক্ষোভ হচ্ছে একবার ও ইরাকে ধন্যবাদ
দেয়া হলো না।
ফেবু আইডি চাইলেও হতো।
নিজের শান্ত করতে পারছেনা।
কিছু মানুষ এর সাথে দেখা হওয়াই উচিৎ না।কেন দেখা হলো এই
ভেবেই অস্থির হচ্ছে।
এমন সময় একটা কল আসে আবির এর ফোন এ।
আবির:- হ্যালো..
ইরা:- হ্যালো
আবির:- কে?
ইরা:- রাফি আছে?
আবির:না,রং নম্বর বলে কেটে দিলো।
আবার সেই নম্বর থেকে কল
আবির রিসিভ করেই,আরেহ ভাই আপনি তো সুবিধার না,বলছিনা,রাফি
বলে কেউ নেই।
ওপাশ থেকে:- আচ্ছা তাহলে এখানে সুবিধার আবির কে পাওয়া
যাবে?
আবির:- কে?ইরা?ও মাই গড বলে স্তব্ধ হয়ে গেলো।
ইরা:- এই যে,হুম আমি ইরা বলছি মশাই।
আবির:- কি করে সম্ভব?
ইরা:- আমি আপনার মতো নাকি? ভীতু হি হি হি
আবির:- নম্বর কি করে পেলে
ইরা:- যখন পানি আনতে গিয়েছিলেন,আপনার
তে ছিলো।আমি আপনার ফোন থেকে আমার ফোন এ কল
দিয়ে নম্বর রেখেছি।
আবির:- Thnx god.বলে খাট এ বসে পরলো।
ইরা:- ফোন ধরে যেভাবে ঝারি দিলেন,ভাবছিলাম আপনি আবির না।
আবির:- হা হা হা.. ইরা বর্ষা কাল কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।
ইরা:- হি হি হি।এভাবেই শুরু হলো নতুন পথচলা,সময় হলো অচেনা
থেকে চেনা,অপরিচিত থেকে পরিচিত,পর থেকে আপন হবার।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন